তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মানুষ হয়ে পড়েছে যন্ত্রনির্ভর। স্মার্টফোন, কিন্ডেল বা ল্যাপটপে আটকা পড়ছে মানুষ। বিভিন্ন কিছু দেখার পাশাপাশি পড়াশোনাও হয়ে পড়েছে স্ক্রিননির্ভর। কিন্তু গবেষণা বলছে, ছাপা বইয়ের কার্যকারিতা ডিজিটাল বা ই-বুকের চেয়ে ছয় থেকে আটগুণ বেশি।
স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটি দাবি করা হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রকাশিত কয়েক ডজন গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে গবেষকরা নতুন এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ওই সব গবেষণায় প্রায় ৪ লাখ ৪৭হ হাজার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল।
নতুন গবেষণাপত্রের সহলেখক লাদিসলাও সালমেরন বলেন, ডিজিটালে আপনি যত বেশিই বই পড়েন না কেন, আপনার টেক্সট বোঝা বা পাঠোদ্ধারের ক্ষমতা তেমন একটা বাড়বে না। ভিন্ন কথায় বললে, ডিজিটাল পাঠ ও পাঠোদ্ধারের ক্ষমতা বাড়ার মধ্যে সম্পর্ক প্রায় শূন্য।
কেন এমন হয়, এর উত্তরে সালমেরন বলেন এর নানা কারণ আছে। প্রথম, ভাষাগত মান। অনলাইনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট পড়ি। এসব পোস্ট সাধারণত ছোট ছোট বাক্যে সহজ সরল শব্দ দিয়ে লেখা হয়। অন্যদিকে ছাপা বইয়ের ভাষাগত মান সাধারণত উন্নত। অনেক বেশি জটিল। সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের বাক্য গঠন ও যুক্তি-তর্ক সরল। তাই এসব পোস্ট কেউ যত বেশিই পড়ুক না কেন, তারা মানসিক দক্ষতা এতটা বাড়বে না, যতটা বাড়বে ছাপা টেক্সট পড়লে।
দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হলো, মাইন্ডসেট। ডিজিটাল টেক্সট সাধারণ দ্রুত পড়া হয়। অনেক সময় চোখ বুলিয়ে যাওয়া হয়। অর্থাৎ ডিজিটাল টেক্সটের সঙ্গে পাঠক তেমন একটা একাত্ম হতে পারে না। তাই তথ্যপূর্ণ কোনো টেক্সেটের পাঠোদ্ধার ঠিকঠাক হয়ে ওঠে না।
অন্যদিকে ডিজিটাল পড়াশোনা বা ই-বুক শিশুদের শব্দভাণ্ডারকে সীমিত করে দেয়। তাই শিশুদের ডিজিটাল টেক্সট বা বই পড়তে দেওয়ার চেয়ে ছাপা বই পড়তে দিতে সুপারিশ করেছেন সালমেরন।
তবে ডিজিটাল পড়াশোনা এড়িয়ে চলার পক্ষে নয় গবেষকেরা। নতুন গবেষণাটির আরেক সহলেখক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী লিডিয়া আলতামুরা বলেন, আমরা ডিজিটাল পড়াশোনার বিরুদ্ধে নই। গবেষণায় যা পাওয়া গেছে আমরা তাই বলেছি। কে কোন মাধ্যমে পড়াশোনা করবে সেটা ব্যক্তি মানুষের নিজের সিদ্ধান্ত। তবে শিশুদের ডিজিটালের চেয়ে ছাপা বইয়ে পড়াশোনায় অভ্যাস করানো ভালো।
সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || SongbadSomoy.com