ঢাকা, বাংলাদেশ ০৫ মে, ২০২৪

স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের আশায় বছর পার!

Publish : 11:01 PM, 29 December 2023.
স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের আশায় বছর পার!
স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের আশায় বছর পার!
নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের অর্থনীতির শঙ্কা যেন কাটছেই না। বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিগত কয়েক বছর দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতেই টালমাটাল হয়ে পরে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। এর উত্তাপ থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশও। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতিতে। 

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং ভিত শক্তিশালী করতে চলতি বছরজুড়ে সক্রিয় ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির পাশাপাশি নতুন পণ্যভিত্তিক বৈচিত্র্যময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ পলিসিগত বাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে কারসাজি, সিন্ডিকেটেশন, ইনসাইডার ট্রেডিং, যোগসাজশের মাধ্যমে শেয়ারদর বৃদ্ধি বা কমানো এবং গুজবনির্ভরতা এখনও কমেনি। এজন্য প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা মুনাফা চায়। 

ফলে জেনে না জেনেও অনেকেই গুজব বা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। একপর্যায়ে পুঁজি হারিয়ে দোষারোপ করা হয় কমিশনকে। তাই দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা, বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন সংশোধন, শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গঠন, বৈচিত্র্যময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দেশে ‘রোড শো’ করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য চলতি বছরটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন।

দেশের শেয়ারবাজারে নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য হিসেবে এসএমই প্ল্যাটফর্ম, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), ট্রেজারি বন্ড, কমোডিটি ও ডেরিভিটিভস এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারে সংযুক্ত করাসহ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। তবে, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সূচক বিবেচনায় তা দৃশ্যমান না হলেও ভবিষ্যতে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত এক বছরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ১৯৫.৩৭ পয়েন্টে। আর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৪৯.২৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৫৩.৯২ পয়েন্ট বা ০.৮৭ শতাংশ। তবে, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক সর্বোচ্চ কমে দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ১৮২.০৯ পেয়েছে। আর সূচকটি ১৬ জুলাই সর্বোচ্চ বেড়েছিল ৬ হাজার ৩৬৭.৪২ পয়েন্টে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সূচক ছিল ১ হাজার ৩৫৫.৫৯ পয়েন্টে। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইএস সূচক অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৫.৪৪ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৯.৮৫ পয়েন্ট বা ০.৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র ডিএস৩০ সূচক ছিল ২ হাজার ১৯৩.৬০ পয়েন্টে। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএস৩০ সূচক কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯৪.৫৮ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৯৯.০২ পয়েন্ট বা ৪.৫১ শতাংশ। 

এদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ২৬৪ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭০৬ কোটি ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ফলে, প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার টাকা ১.৭৭ শতাংশ। তবে, চলতি বছরের ১ নভেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

অন্যদিকে, এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময় ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজারের নিচে। আর লেনদেন ছিল ১০০ কোটি টাকার নিচে। তাদের নেতৃত্বে ২০২১ সালের ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩৬৭.৯৯ পয়েন্টে, যা এখনও পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বছরজুড়ে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন এবং ভিত শক্তিশালী করতে বিএসইসির নেওয়া পদক্ষেপগুলো হলো:

নানান আলোচনা সমালোনার কেন্দ্রে ছিল ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা। যা ছিল চলতি বছরের মধ্যে বিএসইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৭ জুলাই। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে সংস্থাটি। পরবর্তীতে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১৬৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিন একটি-দুটি শেয়ার কেনাবেচার বিপরীতে ১ শতাংশ হারে দর কমতে থাকায় চলতি বছরের গত ১ মার্চ তৃতীয় দফায় ফের ১৬৭ শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে আনে বিএসইসি, যা এখনও বহাল আছে। 

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তা বহাল রেখেছে কমিশন। তবে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার কর নেওয়া হবে বলে ধারণা করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে পুঁজিবাজারের সদস্য করা:

বছরের শেষ দিকে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে পুঁজিবাজারের সদস্য করা বিএসইসির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গত ১৯ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খুললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা। পুঁজিবাজারের অন্যতম ব্রোকারেজ হাউজ উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তাদের এই বিও হিসাব খোলা হয়েছে। এটি বিএসইসির অন্যতম একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, একই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার পূর্বে উত্তরা ব্যাংকের (তৎকালীন ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশন) ৪০টি শেয়ার এবং এ যাবতকালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ব্যাংকটির প্রদান করা লভ্যাংশ তার যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে দায়মুক্ত হয়েছে বিএসইসি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিংয়ে রোড শো: 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিং, ব্যাপ্তি বাড়ানো ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য বছরজুড়ে সক্রিয় ছিল বিএসইসি। চলতি বছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ৬ মার্চ, এশিয়ার জাপানে ২৭ এপ্রিল, সাউথ আফ্রিকায় ২৩ আগস্ট এবং ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে ২৩ ও ২৫ অক্টোবর, জার্মানিতে ৩০ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর এবং বেলজিয়ামে ৩ নভেম্বর রোড শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত রোড শো-গুলোতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা তুলে ধরা হয়। ওই রোড শো’র পরিপ্রেক্ষিতে দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বিএসইসির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা:

চলতি বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা। তবে, এ সিদ্ধান্তটি বিএসইসির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে পুঁজিবাজারে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ ব্যাংকের পুঁজিবাজারের মোট বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতো। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর ২৬ক ধারায় ২০২৩ সালের সংশোধনী অনুসারে, ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও ইসলামিক শরিয়াহভিত্তিক সুকুক নির্ধারিত বিনিয়োগসীমার (এক্সপোজার লিমিট) অন্তর্ভুক্ত হবে না। 

এ ছাড়া শেয়ার, বন্ড, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে নির্দেশনা পুঁজিবাজারে জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তটি বিএসইসির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হিসাবে স্থিতিপত্রের বিভিন্ন দফার মধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজ বাদে অন্যান্য সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে সর্বশেষ বাজারমূল্য ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হলে ক্রয়মূল্য ও সর্বশেষ বাজারমূল্যের পার্থক্যের সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। দামের এই পার্থক্যকে বিনিয়োগের মূল্য কমার ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা কোনও তহবিলের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য। এ ছাড়া ইক্যুইটি শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা তালিকাভুক্ত কোনও তহবিলের প্রতি ক্ষেত্রে আলাদাভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে।

অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু: 

নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য হিসেবে চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করা হয়। এটা সিদ্ধান্ত বিএসইসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটা দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। উদ্বোধনী দিনে এটিবিতে তালিকাভুক্ত হয় ইকুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ এবং ডেবট সিকিউরিটিজ হিসেবে প্রাণ এগ্রোর বন্ড। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর এটিবি বোর্ডে আইএফআইসি ব্যাংক দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নন-কনভার্টেবল, রিডিমেবল, আনসিকিউরড, ফ্লোটিং রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ডের লেনদেন শুরু হয়।

দেশের কমোডিটি ডেরিভেটিভস মার্কেট এবং ডেরিভেটিভস পণ্যের সুষ্ঠু, দক্ষ ও স্বচ্ছ লেনদেনের জন্য চলতি বছরের গত ১৬ অক্টোবর বিধিমালা তৈরি করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে বিএসইসি। দেশের আর্থিক বাজারের জন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম নতুন প্রোডাক্ট। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ বাজার বিবেচনায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সম্ভাবনা অনেক। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ হবে। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুলবে নতুন দিগন্ত।

বন্ড মার্কেট উন্নয়নে চলতি বছর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন। বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সহায়ক ইকোসিস্টেম সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন তৈরির জন্য বিএসইসি ও ইউএনডিপি একসাথে কাজ করছে। এ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশে সাসটেইনেবিলিটি বন্ড গাইডলাইন তৈরি করছে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বন্ডগুলো এখন ভালো রিটার্ন দিচ্ছে। নারীদের জন্য ‘অরেঞ্জ বন্ড’ নামক এক বিশেষায়িত বন্ড তৈরি করছে বিএসইসি।

মার্জিন ঋণ সুবিধা:

চলতি বছর মার্জিন ঋণ সুবিধা বাড়িয়েছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা রয়েছে, সেসব শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) যদি ৫০ পর্যন্ত হয় তাহলেও মার্জিন ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিধান করে বিএসইসি। চলতি বছরের গত ৪ মে এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়।

পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর:

চলতি বছরের ৩০ মার্চ পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান সীমা শতকরা ষাট ভাগ (৬০ শতাংশ) থেকে বাড়িয়ে আশি ভাগ (৮০ শতাংশ) করা হয়। আর গত ১৭ আগস্ট দেশের পুঁজিবাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শীর্ষস্থানীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে লেনদেন সহজতর করতে অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপ তৈরি এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সভা আয়োজন করে বিএসইসি। সেখানে ‘লাইসেন্সড মিউচুয়াল ফান্ড সেলিং এজেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে, বিমা কোম্পানির মতই মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করবে এজেন্টরা। তবে গত ১৯ ডিসেম্বর একটি নির্দেশনা জারি করে পুঁজিবাজারে কোনো ফান্ড আনতে ব্যর্থ হলে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ায় কোটা সুবিধা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক ও তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দেয় কমিশন।

ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের পরিবর্তে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার চালু:

চলতি বছর ৩ অক্টোবর ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণের জন্য পৃথক ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের পরিবর্তে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার চালুর নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এ সফটওয়্যার চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

ইসলামিক শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ ইস্যু:

দেশের পুঁজিবাজারে ইসলামিক শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ ইস্যু আনা, ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৮ মে ৯ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের (এসএসি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শরীয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত:

চলতি বছরের ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি শেরাটন হোটেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) সভা প্রথমবারের মত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয়, স্পেনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন-কানুন, বিধিমালা, চলমান পরিস্থিতি, ঝুঁকি, সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়সহ পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নতির বিষয়ে আলোচনা হয়।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা স্পষ্টীকরণ:

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা স্পষ্টীকরণ, নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে সতর্কতা বাড়াবে ডিএসই-সিএসইর একাত্মতা, মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি কমাতে পুঁজিবাজারে ‘ফরেক্স’ চালুর উদ্যোগ, পুঁজিবাজার�

অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || SongbadSomoy.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিতে পারে : সিইসি শিরোনাম ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান শিরোনাম জানা গেল সাকিব আল হাসানের ভোট কেন্দ্র শিরোনাম বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা শিরোনাম আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে: ওবায়দুল কাদের শিরোনাম ১৬ ঘণ্টায় ৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬ যানবাহনে আগুন: ফায়ার সার্ভিস