ঢাকা, বাংলাদেশ ০৫ মে, ২০২৪

এ বছরটা ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ, নির্বাচকদের নিয়ে সরগরম ক্রিকেটপাড়া

Publish : 02:10 AM, 01 January 2024.
এ বছরটা ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ, নির্বাচকদের নিয়ে সরগরম ক্রিকেটপাড়া
এ বছরটা ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ, নির্বাচকদের নিয়ে সরগরম ক্রিকেটপাড়া
স্পোর্টস ডেস্ক :

দেখতে দেখতে শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আরো একটি বছর। শেষ দিকে এসে হিসেবের খাতা খুলে বসেছেন অনেকে। পাওয়া- না পাওয়ার হিসেব কষছেন সবাই। ক্রিকেটিয় দিক থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও হয়তো হিসেব মেলাবেন ২০২৩ সালটা কেমন কাটল তাদের। কিন্তু দিন শেষে নিশ্চয়ই হতাশ হতে হবে টাইগারদের। কারণ পাওয়া- না পাওয়ার হিসেব কষলে বাংলাদেশ যে ভুলে যেতে চাইবে বছরটিকে।

অথচ ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় স্বপ্ন নিয়েই বছরটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বছরের মাঝামাঝিতে এসে হিসাব পালটে যায়। ঘরের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ হার। এরপর এশিয়া কাপে ভরাডুরি। সেই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ। 

ভরাডুবির বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরাজয়ের একটা স্তূপ হয়েছে। বছরের শুরুটাও হয়েছিল ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরে। নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে এ বছর মান বাঁচিয়েছে আয়ারল্যান্ড। সিলেট ও চেম্পসফোর্ড মিলিয়ে ফল হওয়া চার ম্যাচের চারটিই জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪৭ ম্যাচের ১৯টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির ফলাফল বাদ দিয়ে)।  

ওয়ানডে ফরম্যাট

বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডে। তবে একদিনের ক্রিকেটে ২০২৩ সালটা খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১১টিতেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপরও একটা দিক থেকে ২০২৩ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সেটা হয় ম্যাচ খেলার দিক থেকে। শেষ হতে যাওয়া বছরটাতে নিজেদের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩২টি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে অংশ নিয়েছে লাল সবুজের দল।

আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫টি ওয়ানডে খেলেছে সবশেষ বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল ভারত। এই তালিকায় দুই নম্বরে আছে নিউজিল্যান্ড। ৩৩টি ওয়ানডে খেলতে মাঠে নেমেছে কিউইরা।

২০২৩ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভালো সময় কাটেনি। ভালো করার আভাস নিয়ে তৃতীয় হয়ে ফিরেছে টাইগাররা। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে সুপার চারে জায়গা করে নিলেও সুপার ফোরে ৩ ম্যাচের ২টিতে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তৃতীয় দল হয়ে। আর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। 

এরপর সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়া দূরের কথা, বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল করে হতাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপে মোট ৯ ম্যাচ খেলে কেবল দুই জয় বাংলাদেশ। যা আগের কোনও বিশ্বকাপে এমন হয়নি লাল-সবুজদের। 

এর মধ্যে ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় চোখে পড়ার মতো। টপ-অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় মূলত কার্যত পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভারত ম্যাচ ব্যতীত সব ম্যাচেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে টপ-অর্ডার। বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছেন তানজিদ হোসেন তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তওহীদ হৃদয়ের মতো ব্যাটাররা।

তাছাড়া বিশ্বমঞ্চে সুযোগ কাজে না লাগাতে পারাও বাংলাদেশের হারের অন্যতম কারণ। সাকিব বাহিনী সেই সুযোগ লুফে নিতে পারছে না। অন্যদিকে চলতি বিশ্বকাপে তরুণদের ওপরেই আস্থা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তারা দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তরুন তানজিদ, হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো ক্রিকেটাররা। তরুণ দায়িত্ব নিতে পারলে ভালো কিছু পেতে পারতো বাংলাদেশ।

এছাড়া ভারত বিশ্বকাপ জুড়ে আলোচিত ছিল ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। বিশ্বকাপে রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। বিশেষ করে মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং পজিশন বারবার পরিবর্তন বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। অপরদিকে বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা টাইগার পেসার তাসকিন-শরিফুলরা। তবে বিশ্বকাপে হতাশ করছেন তারা। যদিও বছরের শেষ দিকে এসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারলেও এই জয় থেকে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজছে বাংলাদেশ দল।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বছরটা আগের মতোই তিক্ততায় গেছে বাংলাদেশের। ব্যাটে-বলে হতাশা দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা। পুরো বছরে চারটি সিরিজ মিলিয়ে মোট ১১ ম্যাচে মাত্র ৭টি জয় এসেছে বাংলাদেশের (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির ফলাফল বাদ দিয়ে)। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটটির সঙ্গে যেন বাংলাদেশের তিক্ততা আগে থেকেই। বারবার নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়েছে। বছরের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ সিরিজ জয় যেনো বড় সফলতা এ  বাদে তেমন রেকর্ড নেই বাংলাদেশের।

টেস্ট ক্রিকেটে ব্যর্থতার গান 

সকালের সূর্য দেখলে বলে দেওয়া যায় দিনটি কেমন যাবে। তবে বাংলাদেশের টেস্ট ভাগ্যের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। বছরের শুরুতেই দুর্বল প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় এসেছে। এছাড়া আফগানদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ে জয়। আর বছরের শেষে ঘরে মাঠে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে হারানো। তিন সিরিজের দুইটি জয় দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ফলে ২০২৩ সালে ক্রিকেটের বড় পরিসরে টাইগারদের নেই কোনো সামগ্রিক রেকর্ড।

বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নির্বাচক প্যানেল

বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোচিত বিষয় এখন প্রধান নির্বাচক ইস্যু। সাবেক ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে এই পদে দেখতে নারাজ প্রায় বেশিরভাগ ভক্ত। দল খারাপ করলেই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হয় নির্বাচক প্যানেলকে। ক্রিকেট ভক্তদের বহু ক্ষোভের সঙ্গে মিশে থাকা এই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরেই। 

ক্রিকেট পাড়া আর ভক্তদের মাঝে গুঞ্জন চলতি মেয়াদের পর নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে চায় বিসিবি। কদিন আগেই সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল নির্বাচক হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এছাড়া বাতাসে ভাসছে আরও কিছু নাম। তবে ক্রিকেট বোর্ড এই ব্যাপারে সময় নিতেই আগ্রহী। 

গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘এটা (নির্বাচকদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া) আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। প্রধান নির্বাচক পরিবর্তন করা, নতুন কাউকে দেওয়া বড় একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে সবাইকেই চিন্তাভাবনা (ব্রেইনস্টর্ম) করতে হচ্ছে, সময় লাগবে। তবে আমরা সিদ্ধান্তে আসব। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের চুক্তি। এরপর চুক্তি নবায়ন হবে কি হবে না, সেটা পরের ব্যাপার।’

কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া শেষ হবে, সেই আভাসটাও দিয়ে রেখেছেন বিসিবির এই কর্তা, ‘আমাদের নিজস্ব আলাপ আলোচনা হয়েছে তাদের সঙ্গে। সিদ্ধান্তটা হবে নির্বাচনের পরে। আমরা ঠিকঠাক করে রাখতে পারি। বোর্ডে আলাপ আলোচনার পর (সিদ্ধান্ত) হবে।’

বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিসিবি। সেই কমিটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। গণমাধ্যমের সামনে এলো সেই প্রসঙ্গ। ব্যর্থতার প্রশ্নে বড় নাম প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার ব্যাপারেও আলোচনা আর সময় নেওয়ার পক্ষে জালাল, ‘(তদন্ত) কমিটির ওপর নির্ভর করছে। কমিটির কী ফাইন্ডিংসএগুলো বোর্ডে দেবে। বোর্ডে আলোচনা হবে।'

সবকিছু বিবেচনায় নিলে তাই ২০২৩ সালটা ভুলে থাকতেই চাইবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

খেলাধুলা বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || SongbadSomoy.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিতে পারে : সিইসি শিরোনাম ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান শিরোনাম জানা গেল সাকিব আল হাসানের ভোট কেন্দ্র শিরোনাম বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা শিরোনাম আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে: ওবায়দুল কাদের শিরোনাম ১৬ ঘণ্টায় ৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬ যানবাহনে আগুন: ফায়ার সার্ভিস