ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের চমচমের নাম শুনলে অনেকের জিভে জ্বল আসে। ২০০ বছর ধরে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচমের নামডাক ও ঐতিহ্য রয়েছে। তবে পোড়াবাড়ীর চমচমের জন্য এখন বিখ্যাত টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার। এলাকাটি মিষ্টি বিক্রির স্থান হিসেবে বিখ্যাত। এখানে অন্তত ১৬টি মিষ্টির দোকানের চমচম তৈরি হয়। তবে গত তিন মাস যাবত গ্যাস সংকটের কারণে টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাসের সংকট থাকলেও তাদের আগের মতোই পুরো গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়।
চমচম ব্যবসায়ীরা জানান, গত অক্টোবর থেকে গ্যাস তারা স্বাবাভিকভাবে গ্যাস পাচ্ছে না। জ্বালানি হিসেবে তারা কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে তারা চমচম তৈরি করছেন। এতে চার ভাগের এক ভাগ উৎপাদন করতে পারছেন না কারিগররা। ফলে চমচম উৎপাদন ব্যাহতসহ খরচ কয়েক গুণ বেশি হচ্ছে।
সরেজমিন টাঙ্গাইল শহরের চমচমের দোকান গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি চমচমের শোরুমের আলাদা আলাদা কারখানা রয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানায় ৪ থেকে ৮ টি কওে গ্যাসের চূলা বসানো আছে। প্রত্যেকটি চুলায় গ্যাসের সংযোগ থাকলেও গ্যাস না পাওয়ায় তার কাঠের লাকড়ি পুড়িয়ে প্রথম দুধ জাল করছে। পরে সেই দুধ থেকে ছানা বের করছে। আর সেই ছানা ও চিনি এবং আংশিক ময়দা দিয়ে চমচম তৈরি করছে। চমচমে নরম ভাব যেমন, তেমন ঘ্রাণেও অনন্য। দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি গুঁড়া মাওয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয় যাতে স্বাদে আনে অন্যরকম বৈচিত্র্য।
গাজীপুর থেকে আসা ক্রেতা রাকিব হাসান বলেন, বইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের চমচমের সুখ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিষয়টি জানার পর টাঙ্গাইল এসে চমচম কিনে খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। সেই কারনে দুই বন্ধু টাঙ্গাইল এসেছি। দুই কেজি চমচম ৬০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। খেতে অনেক সুস্বাধু ও প্রসিদ্ধ।
গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমান গ্যাস খুবই কম। লাকড়ি দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ মণের বেশি লাকড়ি লাগে। তবে উৎপাদন আগের মতো না হওয়ায় এক বেলা দোকানে মিষ্টি থাকে, আরেক বেলা থাকে না। এতে বেচাকিনিও খুব কম হয়।
পোড়াবাড়ী মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী আবু সাইদ বলেন, গ্যাস স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ করে চমচম উৎপাদন করা যেতো। বর্তমানে কাঠে খড়ি দিয়ে চার ভাগের এক ভাগও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মন উৎপাদন করা যায়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তবে গ্যাস কম সরবরাহ থাকলেও বিল সমপরিমাণই আসে। আগে মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল আসতো এখনও ৫০/৬০ হাজার টাকা বিল আসে।
জেলা রেস্তোরা ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এবং জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্ত¡াধিকারী স্বপন ঘোষ জানান, গ্যাস সংকটের কারনে বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ টাঙ্গাইলের চমচম উৎপাদন করা যাচ্ছে। প্রতিদিন আমার দোকানে ২০/২৫ মণ লাকড়ি ব্যবহার হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করায় খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। শহরের প্রত্যেকটি মিষ্টির দোকানের কারখানায় গ্যাসের চূলায় চমচম তেরি করা হয়। গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ঢাকা প্রধান ফিডার থেকে গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমিতির অধীনে ২০০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। আর সবমিলিয়ে টাঙ্গাইল জেলায় ১০০০টির মতো মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে চমচম বিক্রি হয়।
টাঙ্গাইল জোনাল মার্কের্টিং অফিসের ম্যানেজার খোরশেদ আলম বলেন, ফিডার লাইন থেকে গ্যাস কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন গ্যাস পেতাম। বর্তমানে প্রতিদিন পাচ্ছি ৪০ মিলিয়ন। ভোলায় কিছু গ্যাস আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই গ্যাস ঢাকায় আনার চেষ্টা করছে। সেটি আনতে পারলে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || SongbadSomoy.com