ঢাকা, ০৭ জুন, ২০২৩
Brand Logo

ঋণ দিতে আইএমএফের বহু শর্ত, চাপে পড়বে সাধারণ মানুষও

প্রকাশিত: 01:55 AM, 04 February 2023

ঋণ দিতে আইএমএফের বহু শর্ত, চাপে পড়বে সাধারণ মানুষও

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ দেওয়ার বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশকে।

নিউজ ডেস্ক

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ দেওয়ার বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশকে। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে শর্তগুলো পূরণের খেসারত দিতে হতে পারে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে।

মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটিই দাম ঠিক করা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।

ভর্তুকি কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের এক দর করাসহ সব ধরনের সংস্কারেরই একটা মূল্য ও ব্যথা আছে। এ ব্যথা বহন করতে হয় শেষ পর্যন্ত জনগণকে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষকে।

আইএমএফ গত সোমবার বাংলাদেশের জন্য ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে বৃহস্পতিবার সময়বদ্ধ শর্তগুলো প্রকাশ করেছে। কোন সময়ে বাংলাদেশকে কী করতে হবে, তা-ও বলে দিয়েছে সংস্থাটি। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যৌথভাবে গত ২৩ ডিসেম্বর আইএমএফকে যে চিঠি দিয়েছেন, তা-ও তুলে ধরেছে আইএমএফ। চিঠিতে আইএমএফের শর্তগুলো মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর।

অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর আইএমএফকে জানিয়েছে, ঋণ কর্মসূচি চলাকালে সাড়ে তিন বছরে এমন সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে নেমে আসে। আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকবে চার মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান।

অথচ অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা বলছেন, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বাড়বে। তাতে পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে, যার ভুক্তভোগী হবেন সাধারণ মানুষ। 

বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ডলারের দর বাজারভিত্তিক ও একটি দাম নির্ধারণ করা হবে। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে এক লাফে তা অনেক বেড়ে যাবে এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হতে পারে। তখন পণ্য আমদানিতে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণের সুদ বাজারভিত্তিক করার কথা আইএমএফ সরাসরি বলেনি। তবে আইএমএফ বলুক না বলুক, এটা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর ডলারের দর একটি হওয়াও বাঞ্ছনীয়। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের সব শর্ত বিশ্লেষণ করলে কঠিন তেমন কিছু নেই। কর-প্রশাসন থেকে কর-নীতি আলাদা করার সংস্কারের কথা যদি থাকত, তাহলে একটা ভালো কাজ হতো।

এদিকে কর-জিডিপির হার ঋণ প্রাপ্তির প্রথম দুই বছর দশমিক ৫০ শতাংশ ও পরের বছর দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ। দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন, তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে সরকার সে পথেই যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। 

জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ইতিমধ্যে সরকার বাড়িয়েছে, যার প্রভাব জিনিসপত্রের দামের ওপর পড়েছে। এগুলোতে সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বর্তমানে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের কাছাকাছিই আছে। সারে অবশ্য ভর্তুকি বহাল আছে এবং থাকবেও। এ ব্যাপারে আইএমএফও কিছু বলেনি। 

আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ ঋণের যতটুকু সংগ্রহ করে সরকার, তা এক-চতুর্থাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছে আইএমএফ। অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর এতে রাজি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। মুনাফা থেকে কর কেটে রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এখন এমনিতেই কম। আইএমএফের পরামর্শ মেনে সরকার এখন আরও কিছু বিধিবিধান তৈরি করবে, যাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি চূড়ান্ত বিচারেই তলানিতে নামবে। 

২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে বলেছে আইএমএফ। 

এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকেও খেলাপি ঋণের হিসাবে আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে। 

আইএমএফ বলেছে, বিশ্বের যেসব দেশে কর-জিডিপির অনুপাত কম, বাংলাদেশ তার একটি। ফলে দেশটি প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে না। এনবিআরের বর্তমানের আদায় প্রবণতা অনুযায়ী আগামী কয়েক বছর শুল্ক-কর আদায় করতে হবে বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশকে এ আদায় কৌশল ঠিক করতে বলেছে আইএমএফ। এনবিআরের জন্য আরেকটি বড় শর্ত হলো শুল্ক-করের অব্যাহতির পরিমাণ কমানো। কর অব্যাহতি কতটা কমানো হলো, তা তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যালোচনার সময় আলোচনা করবে আইএমএফ।

এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তিন মাস পরপর জিডিপির তথ্য প্রকাশ, প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি আগামী জুনের মধ্যে শুরু করা; জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা শুরু করা; প্রতিবছর ব্যাংকগুলোর খারাপ সম্পদের তথ্য প্রকাশের শর্ত দেওয়া হয়েছে। 

এর বাইরে দ্রুততম সময়ে আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং দেউলিয়া আইন প্রণয়নের শর্তও রয়েছে আইএমএফের। 

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us


সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || songbadsomoy.com

রাজধানীর নিউমার্কেটে অগ্নিকান্ড - দুর্ঘটনা, নাশকতা নাকি পরিকল্পিত অভিনয় শিল্পীদের আইনি সহায়তায় লিগ্যাল উইংস গঠন রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এলো মাহে রমজান 'আজ আমাদের ছুটি' নাটকে অভিনয় শিল্পী সংঘ অভিনয়শিল্পী সংঘ ও ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের সমঝোতা স্বাক্ষর আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে অভিনয় শিল্পী সংঘের মিলনমেলা